আজকে আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব সেটি হল কানের পর্দা ফেটে যায় কেন এবং ফেটে গেলে কি ধরনের লক্ষণ দেখা যায় এবং এর প্রতিকার কিভাবে আমরা করবো। মানুষের শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গ গুলোর মধ্যে কান অন্যতম। অথচ কানের রোগ বিষয়ে আমরা খুব একটা সচেতন নয়। সামান্য কারণেই কানে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। অসাবধান হলে সেই সকল রোগ খুবই গুরুতর হয়ে দেখা দিতে পারে।
আমাদের জন্য একটুখানি সচেতন হলে খুব সহজে আমরা এ ধরনের রোগ গুলো এড়িয়ে থাকতে পারব।
কানের পর্দা ফেটে যায় কেন???
কানের ভেতরের দিকে একটি পর্দার মতো থাকে যা টিম্পানিক মেমব্রেন নামে পরিচিত। মধ্যকর্ণ থেকে অন্তঃকর্ণের মাঝখানে এটি পর্দা হিসেবে থাকে। এটি খুবই স্পর্শ কাতর। শব্দতরঙ্গ কানের পর্দায় কম্পন তৈরি করে এই কম্পন মধ্যকর্ণের ছোট ছোট কর্ডের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে পৌঁছায়, অতঃপর অন্তঃকর্ণ থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছায় এভাবে আমরা শুনতে পায়। কিন্তু বহু কারণে এই পর্দা ফেটে যেতে পারে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ছিঁড়ে যেতে পারে, এতে শুনতে অসুবিধা হয়। কখনো কখনো শ্রবণশক্তি পুরোপুরি লোপ পায়।
কানের পর্দা ফেটে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে মধ্যকর্ণে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এখন আমরা জানবো কেন আমাদের কানের পর্দা ফেটে যায়। কানের পর্দা বিভিন্ন কারণে ফেটে যেতে পারে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- কানে কোনো অসুখ যেমন মধ্যকর্ণে ক্রনিক সাপুরাতিভ অতিতিস মেডিয়া হলে ওটাইটিস মিডিয়া হলে
- উচ্চ আওয়াজে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনলে, যাতে পর্দা ফেটে যায়।
- কানে কোন কিছু প্রবেশ করলে এবং অদক্ষ হাতে তা বের করার চেষ্টা করলে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে।
- দুর্ঘটনা বা আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কানে,
- হঠাৎ বাতাসের চাপ বেড়ে গেলে, যেমন থাপ্পড় মারা, বোমা বিস্ফোরণ, উচ্চশব্দের আওয়াজ, ইত্যাদির কারণে।
- পানিতে সাঁতার কাটার সময় হঠাৎ পানির বাড়তি চাপের কারণে পর্দায় চাপ পড়লে।
- কানের অপারেশনের সময় কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- যাদের কানের পর্দা আগে থেকে দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের ক্ষেত্রে নাক চেপে বাতাস দিয়ে চাপ দিলে কান ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন কারণে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। সাধারণত একজন চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে পরীক্ষা না করে নিশ্চিত ভাবে বলা যাবেনা যে কোন কারনে কানের পর্দা আসলেই ফেটেছে কিনা। তবে কানের পর্দা ফেটে থাকলে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিবে, যা থেকে আমরা অনুমান করতে পারি কানের পর্দা ফেটেছে কিনা……
কান ফেটে গেলে যে লক্ষন গুলো দেখা যাবেঃ
- কানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হবে।
- কান থেকে পরিষ্কার বা রক্ত মিশ্রিত পানি বের হবে।
- কানে মেশিন চলার মত শব্দ হবে।
- মাথা ঘুরানো।
এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ আমরা কানের পর্দা ফেটে গেলে দেখতে পায়।
কানের সমস্যা হলে যা করা যাবেনাঃ
- অনেকে কানে কোন সমস্যা হইলে নিজেরাই কানের ড্রপ ব্যবহার করে। যা কোনোভাবেই উচিত নয়।
- কানের পর্দা ফেটে গেলে অবশ্যই একজন নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ কে দেখানো উচিত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- যাদের কানে আগে থেকে কোন সমস্যা আছে বা কানের পর্দা ফেটে যাবার ইতিহাস আছে তাদের নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলা উচিত।
কান ভালো রাখার জন্য যা করা উচিতঃ
- কানে কোনভাবেই যেন পানি প্রবেশ না করে এজন্য গোসলের সময় কানে তুলা বা ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা।
- উচ্চশব্দে গান না শুনা।
- হেডফোন ব্যবহার করার কারণে যাতে কোনো ইনফেকশন না হয় এই জন্য কোন অসুবিধা হওয়া মাত্র ডাক্তার দেখিয়ে উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক সেবন করা।
- কান খোঁচানো এড়িয়ে চলা।
- নিজে নিজে কোন ওষুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
- কোনো কিছু ঢুকে গেলে আটকে থাকলে নিচ থেকে বের করার চেষ্টা না করা।
কানের পর্দা ছিদ্র হয় অল্প একটু ফেটে যায় তাহলে কয়েক সপ্তাহ পর আপনাআপনি তা ঠিক হয়ে যায়। অনেক সময় কানে ইনফেকশন সন্দেহ করা হলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয় কিন্তু সেটা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শমতো। যদি তিন মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পর্দা ঠিক না হয় সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন অপারেশনের মাধ্যমে কানের পর্দা ঠিক করা। এক্ষেত্রে কিছু জটিলতা হতে পারে। যথাসময়ে কানের পর্দা ফেটে যাবার চিকিৎসা করানো না হলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া মধ্যকর্ণে ঘনঘন ইনফেকশন হয়ে গেলে স্থায়ীভাবে স্মরণশক্তি বিলুপ্ত হতে পারে। ধন্যবাদ।