আজ আমরা জানবো মানুষের গায়ের রং কালো বা সাদা হয় কেন? সমাজে সাদা রঙের মানুষ কে মূল্য দেওয়া হয়, আর কালো রংএর মানুষকে নিগৃহীত করা হয়। সমাজের মানুষের মধ্যে যদি সামান্যতম সচেতনতাবোধ থাকতো, যে কেন মানুষের এক একজনের রঙ একরকম হয় এই বিষয়ে, তাহলে মানুষ কালো মানুষকে নিগৃহীত করত না।
বন্ধুরা আমাদের এই বিষয়ে সচেতনতা খুব বেশি দরকার। কারণ কালো আর সাদা রঙের জন্য ব্যক্তিবিশেষ একান্ত ভাবে দায়ী হন।তাহলে বন্ধুরা আজকে আমরা জানবো……
মানুষের গায়ের রং সাদা বা কালো হয় কেন????
আমাদের শরীরের ত্বকে অনেক ধরনের উপাদান থাকে। এই রকমই একটি উপাদান হলো মেলানিন। মানুষের গায়ের রং সাদা বা কালো হয় মূলত ত্বকে এই মেলানিন এর উপস্থিতির কারণে। মেলানিন কম বা বেশি থাকার উপরেই নির্ভর করে একজন মানুষ সাদা হবে নাকি কালো হবে। যার শরীরে মেলানিন যত বেশি সেই রঙের দিক দিয়ে তত কাল হয়। এই মেলানিন ত্বকে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি বা অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করে। অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকে প্রবেশ করে ভিটামিন ডি তৈরি করে। আবার এই অতিবেগুনি রশ্মি যদি আমাদের ত্বকে বেশি হয়ে যায় তাহলে কিন্তু স্ক্রীন ক্যান্সার বা ত্বকের ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে।
এখন একটু খেয়াল করলেই আমরা বুঝতে পারবো বিষয়টি,
- সূর্যের তাপ এর কারনে গায়ের রঙের তারতম্যঃ
যেসব অঞ্চলে সূর্যের তাপ যত বেশি পড়ে, ওই সব অঞ্চলের লোকজন ততবেশি কালো হয়, আর যেসব অঞ্চলে সূর্যের তাপ কম পড়ে সেই সব অঞ্চলের মানুষ তত সাদা হয়। কারণ সূর্যের তাপ বেশি মানে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বেশি পড়া। বেশি পরিমাণ অতিবেগুনি রশ্মি ঠেকাতে মেলানিন বেশি প্রয়োজন হয়। আর বরফ পড়া দেশগুলোতে ঠিক তার উল্টো। তাই এখানকার মানুষের গায়ের রং সাদা আর আফ্রিকান গনগনে আবহাওয়ায় মানুষগুলোর শরীরে মেলানিন থাকে বেশি তাই গায়ের রং কালো হয়।
মেলানিন ছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে আমাদের গায়ের রং কালো বা সাদা হতে পারে বা রঙ বদল হতে পারে।
- রোদে পোড়ার সাথে ত্বকের কালো বা ফর্সা হওয়ার কারনঃ
রং কালো হবার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো রোদে পোড়া। রোদে অতি বেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচার জন্য মেলানোসাইট মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে ত্বক কালো হয়ে যায়। ছোটবেলার ফর্সা রং তাই বড় হতে হতে রোদে পুড়ে বাইরে ঘুরে ধীরে ধীরে কালচে হয়ে যায়। গ্রন্থির অকার্যকারিতা ধীরে ধীরে ত্বক, ত্বকের ভাঁজ এর উপর ও অনাবৃত স্থান কাল হয়ে যায়। একে বলা হয় এডিশনস ডিজিজ।
- গর্ভকালীন হরমোনের প্রভাবেঃ
গর্ভকালীন হরমোনের প্রভাবে ও অন্যান্য স্থানে মানুষের শরীরের রং কালো হয়ে যেতে পারে।
- কেমোথেরাপি দিলেঃ
এছাড়া কেমোথেরাপি দিলে বা মিনোসাইক্লিন জাতীয় ওষুধের প্রভাবেও গায়ের রং কালো হয়ে যেতে পারে।
- লিভার সিরোসিসঃ
যকৃতের দীর্ঘমেয়াদি রোগে গায়ের রং কাদার মত বর্ণ ধারণ করতে পারে। ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা মোটা হয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস ইনসুলিন রেজিস্টেন্স এর কারণে দেহের ভাঁজে ভাঁজে যেমন বগলে ঘাড়ে কালো বর্ণ হয়।
গায়ের রং প্রকৃতপক্ষে ত্বকের মেলানিন এর মাত্রার উপর। আমি আগেই বলেছি তাই গায়ের রং ফর্সা ও উজ্জ্বল করার নানা চেষ্টা আসলে অত উপকার বয়ে আনে না। তবে রোদে পুড়ে প্রতিরোধ করার জন্য আপনি চশমা, ছাতা, সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। হঠাৎ করে রঙের অস্বাভাবিক পরিবর্তন করলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
- পিতা এবং মাতার গায়ের রঙের উপর ও সন্তানদের গায়ের রঙ নির্ভর করে থাকেঃ
বন্ধুরা বাবা-মার গায়ের রং ফর্সা হলে সন্তানের গায়ের রং ফর্সা হয় এটার অনেক সুন্দর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। আবার এটা নাও হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিতা-মাতার জেনেটিক প্রভাব ছেলেমেয়েদের সকল বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি গায়ের রঙের উপর ও পড়ে। তাই সন্তান ফর্সা বা কালো হবার পিছনে বাবা মায়ের গায়ের রঙও অনেক বড় ভূমিকা রাখে। এছাড়াও আরো যে বিষয়গুলো রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো……
- আবহাওয়া এর সাথে গায়ের রঙের সম্পর্কঃ
আমাদের আবহাওয়ার কারণে আমাদের গায়ের রং ফর্সা বা কাল হতে পারে।
- কাজের পরিবেশঃ
যে বিষয়টি আমাদের গায়ের রং কালো বা ফর্সা করার জন্য দায়ী সেটি হলো আমাদের কাজের পরিবেশ। আমরা যদি সারাক্ষণ ঘরে বন্দী হয়ে কাজ করে থাকি তাহলে রোদে পোড়া ভাব আমাদের শরীরকে স্পর্শ করে না, কিন্তু আমরা যদি বাইরে কাজ করি তাহলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারবো না, যার কারনে কাজ করতে গিয়ে আমাদের শরীরের রং পুড়ে কালো হয়ে যায়।
তাহলে বন্ধুরা এখন আমরা জানতে পারলাম কেন আমাদের শরীরের রং কালো বা ফর্সা হয়। অনেক কারণ বললাম তার মধ্যে কিছু কারণ চাইলে আমরা এড়িয়ে চলে প্রতিরোধ করতে পারি, আর কিছু কারণ সম্পূর্ণ আমাদের হাতের বাইরে যেমন মেলানিন এর প্রভাব। এরপর হল জেনেটিক। এই সকল বিষয়গুলো সত্যি আমাদের হাতের বাইরে তাই আমাদের উচিত আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কালো এবং সুন্দরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করা। ধন্যবাদ।