নিজেকে মানসিক ভাবে সুস্থ রাখার উপায়

 আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমি আপনাদের সাথে কথা বলতে যাচ্ছি।

বিষয়টি হল মানসিক সুস্থতা।

মানসিক সুস্থতা কেন আমাদের জন্য এত দরকার। এবং কিভাবে আমরা মানসিকভাবে নিজেকে সুস্থ রাখতে পারি,সেই বিষয়ে আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব।

কিভাবে মানসিক ভাবে সুস্থ থাকবেন???

মানসিক সুস্থতা আমাদের সার্বিক সুস্থতার এক গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি।

শারীরিক সুস্থতার জন্য আমরা অনেক কিছুই করি। জিমে যায়, হাঁটতে বেরোই, সাঁতার কাটি বা অন্যান্য খেলাধুলা করি।

ঠিক একই রকমভাবে আমরা সুস্থ মানসিকতার অধিকারী হবার চেষ্টা করতে পারি।

একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো যে, কোনো মানসিক রোগ নেই মানে সে ব্যক্তি মানসিকভাবে সুস্থ।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এ ধারণাটির সাথে একমত নন।

সুস্থ মানসিকতা কেন জরুরি……………

আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা ও তার ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ কাজ নয়। কারণ এটি নিয়ন্ত্রণ করা না হলে জীবনে বিভিন্ন দুঃখ-কষ্ট ,ব্যক্তিগত সম্পর্কের সমস্যা ও অন্যান্য মানসিক ব্যাধির উদয় হতে পারে।

সুস্থ মনের অধিকারী হলে আমরা নিশ্চিন্তে যেকোনো প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে পারব।এর ফলে আমরা দৈনন্দিন জীবনে আরও কর্মঠ হয়ে  উঠতে পারব।

একজন মানসিক ভাবে সুস্থ মানুষ অন্যের সাথে আরো ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হন। আর যে কোন বাধা কাটিয়ে জীবনে এগিয়ে চলতে পারেন।

আমাদের দেশের একদল গবেষকদের মতে…………

আমাদের বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। অপছন্দের লোকদের মাঝে বসবাস করতে হয়। আমরা সেই সমস্ত পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি।

অথচ তার বদলে আমাদের চারপাশের মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে ফেলা কিন্তু অনেক বেশি সহজ হয়।

পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারলে  মানসিক সুস্থতার পথে একধাপ এগিয়ে যাব। 

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে,

যে দৈনন্দিন জীবনে সামান্য পরিবর্তন আনবে, এই কাজটা খুব সহজ হয়ে উঠবে।

সে জন্য আপনি নিচের লেখা পরামর্শগুলো মেনে দেখতে পারেন………

সর্ব প্রথমেঃ

শরীরের যত্ন নিন। শারীরিক সুস্থতার সাথে মানসিক সুস্থতার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এর জন্য আপনি পুষ্টিকর খাবার খান। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেন  নিয়মিত ব্যায়াম করুন। রোজকার খাবারের সাথে যদি ভিটামিন বি টুয়েলভ, ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার, তাহলে তা  আপনার মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন গুলোকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করবে।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। কারণ ঘুমের সময় আমাদের শরীর সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত কোষ গুলোকে সারিয়ে তোলে।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আপনি ক্লান্ত খিটখিটে হয়ে পড়বেন। নিয়মিত ব্যায়াম আপনার খিদে বাড়াতে সাহায্য করবে। ফলে আপনার ভালো ঘুম হবে এবং সব মিলিয়ে আপনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন,

দ্বিতীয়ত……

সূর্যের আলো আমাদের শরীরে একটি রাসায়নিক এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি আমাদের মস্তিষ্ককে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।ফলে সূর্যের আলোয় আমাদের মন ভালো হয়ে যায়।

পরিশ্রম করা ও জরুরী। এর ফলে শরীরের ক্লান্তি ও মানসিক চাপ হ্রাস পায় ।

মনকে চাঙ্গা রাখতে নিজের পছন্দের কোনো কাজ করুন।

তিতীয়ত ………

নিজের যত্ন নিন। সুস্থ মানসিকতা পেতে নিজের যত্ন নেওয়া দরকার। মনের মধ্যে আবেগ চেপে রাখবেননা। আবেগ প্রকাশের ফলে মানসিক চাপ ও জটিলতা কমে যায়।

নিজের জন্য কিছুটা সময় আলাদা রাখুন।

নিজের মনের কথা শুনুন, বই পড়ুন, ব্যক্তিগত সব কাজ ও যন্ত্রপাতি দূরে সরিয়ে নিজের আশেপাশের দুনিয়াটাকে উপলব্ধি করুন।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, অধ্যাপক ডাক্তার এম মনজুর এর  কথা অনুযায়ী…………

ভুত ও ভবিষ্যৎ এর দিকে খেয়াল না দিয়ে বর্তমানের দিকে নজর দেওয়ায় হল  মনোযোগ।

খামখেয়ালীর স্রোতে ভেসে না  গিয়ে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী চিন্তায় সাড়া দেওয়া।

একেবারে একটি কাজে মনোযোগ দেওয়া, পরের ছিদ্রান্বেষণ না করে যেকোনো পরিস্থিতিতে অবিচল থাকার নামই মনোযোগ।

এরপর আপনি চারপাশ থেকে আরও বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন, যা আপনাকে যেকোনো অবস্থায় মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে।

চতুর্থত ………

পছন্দের মানুষের সাথে সময় কাটান। পছন্দের লোকজনের সাথে সময় কাটান। এতে নিজের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জন্মায়। বন্ধুবান্ধব পরিবার সহকর্মী এবং প্রতিবেশীদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন। এর ফলে আপনি সবার সাথে নিজেকে যুক্ত অনুভব করবেন।

সহকর্মীদের সাথে একদিন খেতে যান। বা সহকর্মীদের নিয়ে একদিন ঘুরতে বের হন বা এমন হতে পারে অনেকদিন বাদে কোন পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা করেন। একটি মিষ্টি হাসির আলিঙ্গনের বিকল্প কোন প্রযুক্তি হতে পারেনা।

পঞ্চমত……

পছন্দ অনুযায়ী কাজ করলে মন ভাল থাকে। এর ফলে মাথায় দুশ্চিন্তা আসে না।  এবং দমিত আবেগগুলো প্রকাশ পায়।

তাছাড়া শখের কাজকর্ম করলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। নতুন কাজের সঙ্গে যুক্ত হলে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিও তৈরি হয়। আপনি নিজেকে আত্মবিশ্বাসের সাথে মেলে ধরতে এসে নতুন জিনিস শিখলেন। এবং নতুন কিছু শেখার আনন্দে মন ভালো থাকে, 

ষষ্টত ……

দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করুন। আমাদের সবারই বিভিন্ন লোকজন বা পরিস্থিতির কারণে দুঃশ্চিন্তা হয়।

এ কারণগুলোকে প্রথমে চিহ্নিত করুন। তারপর সেগুলোর উপর পুনরায় বিচার করুন। আপনি সেগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে পারেন।

অনেক সময় সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আপনি সেই ব্যক্তিদের বা পরিস্থিতিতে সামলাতে পারেন না এজন্যই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট শেখা জরুরী।

সপ্তমত…………

নিজের উপরে ভরসা হারাবেন না। আমরা সকলেই আলাদা। এবং আমাদের প্রত্যেকের  মধ্যেই নিজস্ব ক্ষমতা এবং দুর্বলতা রয়েছে। নিজের দুর্বলতা কে মেনে নিয়ে নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখলে জীবনে এগিয়ে চলার পথ সহজ হয়।

সবারই কোন না কোন দুর্বলতা থাকে আপনারও আছে।

কেউ নিখুঁত নয়।আপনি নিজের দুর্বলতা দূর করার প্রয়াস করতে পারেন অথবা সে গুলোকে নীরবে মেনে নিতে পারেন,

আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মত আপনিও নিখুঁত নয়। এটা মেনে নেওয়ায় কিন্তু সুস্থ মানসিকতার পরিচয়।

নিজের ক্ষমতা বুঝেই বাস্তবসম্মত লক্ষ তৈরি করুন। সর্বোপরি না বলতে শিখুন এটা কোন অন্যায় নয়।

অষ্টমত……………

নিজেকে মেলে ধরুন অনেক সময়ই আমরা নিজেরাই নিজেদের মেলে ধরতে লজ্জা পায় । নিজের মনোভাব মেলে ধরতে পারা মনকে পরিস্কার করতে সাহায্য করে

আবেগ চেপে রাখার ফলে গুরুতর রকমের ডিপ্রেশনের মতো মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয় ।

সবশেষে বলব………

সাহায্য চান আল্লাহর কাছে । এই দুনিয়াতে সুনিশ্চিত জীবন কাটাতে , কাজে মন খারাপ হলে ,বিপদে পড়লে, হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লে, বিচলিত হয়ে গেলে অথবা পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে পারলে, বিশ্বাসযোগ্য কোন ব্যক্তি যেমন আপনার জীবনসঙ্গী, বন্ধু, অভিভাবক, ভাই বোন বা আত্মীয়দের সাথে কথা বলুন।

তা না হলে একজন কাউন্সিলর এর পরামর্শ নিন। দেরি করবেন না এতে লজ্জার কিছুই নেই বরং একে আপনার আশার আলো হিসাবে দেখুন। জীবনের বাধা বিপত্তি একলা চলতে হবে না। প্রাণ উজ্বল জীবন ই সবার কাম্য।

ধন্যবাদ