আজকে একটি সচেতনতা মূলক বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আজকের বিষয়টি বিশেষ করে মেয়েদের জন্য।
হ্যাঁ বন্ধুরা,
আপনারা যারা ১২ বছরের উর্ধ্বে এবং ৪০ বা ৪৫ বছরের মধ্যে রয়েছেন অর্থাৎ যাদের নিয়মিত পিরিয়ড হয়, আজকের বিষয়টি কেবল মাত্র তাদের জন্য। এছাড়া অন্যরাও এই বিষয়টির প্রতি সচেতন হতে পারেন যাতে করে আপনার চারিপাশে যাদের এই সমস্যা হয় তাদেরকে আপনারা আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন।
তাহলে বন্ধুরা,
জেনে নেওয়া যাক আজকের মূল্যবান বিষয়টি কি??
আজকে আপনাদের জন্য যে বিষয়টি আমরা রেখেছি সেটি হল
মেয়েদের পিরিয়ড কেন হয়? এবং পিরিয়ড চলাকালীন মেয়েরা কেন ব্যাথা অনুভব করে?
তাহলে বন্ধুরা প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, পিরিয়ড কাকে বলে? বয়সন্ধিকালে মেয়েদের শরীরে কিছু পরিবর্তন হয়। ফলে প্রত্যেক মাসে একটা নির্দিষ্ট সময়ে মেয়েদের ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু তৈরি হতে থাকে, তা জরায়ুতে চলে যায় এগুলো একটি সময় পর্যন্ত ঠিক তাকে কিন্তু সে সময়ের মধ্যে যদি কাজে না লাগতে পারে অর্থাৎ জরায়ুতে যদি পুরুষের শুক্রাণু প্রবেশ না করে তাহলে ডিম্বাণু নষ্ট হয়ে যায় সেগুলো জরায়ু থেকে যোনিপথে বের হতে রক্তের সঙ্গে মিশে যায় এবং সেগুলোর যোনিপথের একটা নির্দিষ্ট অংকের ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে চলে আসে। একেই মাসিক বা পিরিয়ড বলা হয়।
এখন আমরা জানবো পিরিয়ডের সময় মেয়েদের ব্যাথা কেন হয়ে থাকে????
বন্ধুরা পিরিয়ডের সময় অল্প একটু ব্যাথা শরীরের দুর্বলতা। এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কারন পিরিয়ডে যে রক্তক্ষরণ আমাদের হয় তার মধ্যে অনেক শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, মিনারেল বা খনিজ পদার্থ বের হয়ে যায় যার কারণে স্বাভাবিকভাবেই একজন মানুষ দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু বন্ধুরা,
অতিরিক্ত মাত্রায় যদি ব্যাথা অনুভূত হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এখন আমরা জানবো পিরিয়ডের ব্যথা কয় ধরনের।
এরপরে আমরা জানবো এই ব্যাথা কেন হয়ে থাকে?
প্রথমে তাহলে জেনে নিই কয় ধরনের ব্যাথা একজন মেয়ের পিরিয়ডের সময় হয়ে থাকে এ ধরনের ব্যাথা কে বিশেষজ্ঞরা সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করে থাকে।
প্রথমটি হলো
প্রাইমারি ডিজমেনোরিয়া
প্রাইমারি ডিজমেনোরিয়া মধ্যে এক ধরনের হয় সেটি সাধারণত ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী মেয়েরা বেশি ভোগেন। একে বলা হয় প্রাইমারি ডিজমেনোরিয়া এর সঠিক কারণ নেই। এটি সাধারণত মা হবার আগ অব্দি হয়। এ সময় আমাদের শরীরে ডিম্বাণু তৈরি হয়। এই ডিম্বাণু গুলো গর্ভধারণের জন্য তৈরি থাকে। শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হলে গর্ভধারণ সম্ভব। তাই মিলিত না হলে শুক্রাণু, ডিম্বাণু গুলি নষ্ট হয়ে যায় এবং একটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে বেরোতে থাকে ক্রমাগত এইভাবেই নষ্ট হবার ফলে পেট ব্যাথা করতে থাকে। তাই একবার স্বাভাবিক গর্ভধারণ হলে এই ব্যথা কমে যায় ।
এছাড়াও কিছু কারণ রয়েছে, অকারণ চিন্তা ছাড়াও বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপ, অশান্তি, ভাঙ্গা স্বাস্থ্য এসব কারণে হয়। এছাড়াও শরীরে উপযুক্ত বিশ্রামের দরকার হয়। খুব বেশি কাজের চাপ থেকে বিরক্তি আসে সেটি একটি কারণ। সাধারণত পিরিয়ড শুরু হবার প্রথম বা দ্বিতীয় দিন অবধি ব্যাথা থাকে। তারপরে কমে যায়।
সেকেন্ডারি ডিজমেনোরিয়া
এছাড়াও এক ধরনের হয় তাকে বলা হয় সেকেন্ডারি ডিজমেনোরিয়া। অনেক গাইনি রোগের জন্য ব্যাথা হবার সম্ভাবনা থাকে। যেমন পেটে যদি ইনফেকশন হয় বা কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকলে এই ধরনের অসুবিধা দেখা দেয়। এছাড়াও জরায়ুতে টিউমার হলে এ ধরনের ব্যাথা অনুভব করা হয়। পিরিয়ড শুরু হবার দুই-তিনদিন আগে থেকেই এই ধরনের ব্যথা শুরু হয় আবার কমে গেলে ব্যাথাও কমে যায়, এর তেমন কোনো আলাদাভাবে চিকিৎসা করা যায় না। শরীরে কোন অসুবিধা বা কোনো রোগ থাকলে সেটা বুঝতে হবে। তার চিকিৎসা করাতে হবে। তাহলেই ব্যাথা কমবে। সাধারণত এই কারণগুলোর জন্যই পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়া আর বিশেষ তেমন কিছু কারণ না থাকলেও আরো কিছু কারণ থেকে যায়।
আরো যে সকল কারনে মেয়েদের মাত্রা অতিরিক্ত ব্যথা পিরিয়ডের সময় হতে পারে তার কারণ হলো
- যাদের বয়স ২০ বছরের চাইতে কম এবং যারা খুব বেশি পরিশ্রম করে।
- এছাড়াও যাদের পরিবারের যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাবের ইতিহাস আছে। অর্থাৎ মা খালা ফুফু নানুরে সমস্যা থেকে থাকে তাহলে মেয়েদের এই ধরনের ব্যাথা পিরিয়ডের সময় হতে পারে।
- এছাড়াও যারা ধূমপান করেন যাদের প্রতিবার মাসিকের সময় অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হয়,
- যাদের মাসিক অনিয়মিত যাদের কখনো কোনো বাচ্চা হয়নি।
- যারা সঠিক বয়স এর আগে বয়সন্ধিকাল লাভ করে ফেলেন অর্থাৎ ১১ বছরের আগে যাদের মাসিক আরম্ভ হয়ে যায়।
- নারীদের ক্ষেত্রে এক ধরনের হরমোন থাকে যা জরায়ুর মাংসপেশির সংকোচন ঘটায় যাতে করে জরায়ু থেকে প্রতিমাসে রক্তজালিকা গুলো বের হয়ে আসে এই সংকোচন যন্ত্রণা এবং ফুলে ওঠার কারনে হতে পারে। যে নারীর দেহে যত মাত্রায় এই হরমোনটি নিঃসরিত হয় তিনি পিরিয়ডের সময় উচ্চমাত্রায় যন্ত্রণা অনুভব করেন।
- কোন কোন ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া কিছু রোগের কারণে যন্ত্রণাদায়ক মাসিকের জন্য দায়ী হয়ে থাকে।
তাহলে বন্ধুরা এতক্ষণ ধরে আমরা উপরে যা বললাম তার মধ্য দিয়ে আপনারা হয়তো অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন কেন আমাদের পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত যন্ত্রণা হয়ে থাকে।
আমাদের দেওয়া কারণ এর মধ্যেই বন্ধুরা আপনারা নিজেদের কারণটি খুঁজে বের করুন। কেন আপনাদের এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে আমরা আমাদের পরবর্তী পেইজে এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আরেকটি পরামর্শ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
ধন্যবাদ