মাতৃত্বজনিত দাগ প্রত্যেকটা মেয়ের জন্য অনেকটা চিন্তার বিষয়। যদিও এই দাগ যে উৎস থেকে আমাদের হয় সেটা আমাদের কাছে অনেক খুশির একটি বিষয়। অর্থাৎ প্রত্যেকটা মেয়ের জন্য গর্ভধারণ একটি খুশির খবর। কিন্তু কোন মেয়ে আবার এটা চায় না যে তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাক। একটি মহিলা যখন কোন বাচ্চা গর্ভধারণ করে তখন তার জরায়ুর আকার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক গুণ বেড়ে যায়। পাশাপাশি একটি সন্তান যখন পেটে বড় হয়ে ওঠে সে সন্তানের ওজন এর সাথে সাথে আরও দুই কেজি অতিরিক্ত পানি একজন মাকে সহ্য করতে হয়। আর প্রতিটি মেয়ের পেটে টিস্যুগুলো এভাবে তৈরি হয় যে তারা রাবারের মত ছোট বড় হতে পারে।
মাতৃজনিত দাগ কেন সৃষ্টি হয়ঃ
এখন আমরা আপনাদেরকে বলবো কেন গর্ভধারণ কালীন সময়ে আমাদের পেটের চর্বি বা আমাদের পেট বড় হয়ে যায় এবং যা থেকে পরবর্তীতে মাতৃজনিত দাগের সৃষ্টি হতে পারে।
- বাচ্চা যখন গর্বে বড় হতে থাকে তখন পেটের চামড়ার টিস্যুগুলো বড় হতে থাকে, বা রাবারের মতো চাপ পড়ে সেটা প্রসারিত হতে থাকে। বাচ্চা যত বড় হয় তত বেশি প্রসারিত হয়ে চামড়া বড় হতে থাকে।
- আর চামড়াতে এক ধরনের হরমোন থাকে যা টিস্যুগুলোকে প্রসারিত হতে সাহায্য করে। কিন্তু বাচ্চা প্রসব হওয়ার পরে আমরা আগের স্থানে ফিরে গেলেও যে প্রসারিত ভাব আগে ছিল সেটা কমে যায় না।
- এর কারণে পেটের মধ্যে লম্বা লম্বা দাগের সৃষ্টি হয়। এটা শতকরা ৯০% মেয়েদের হয়ে থাকে।
- আমাদের শরীরের অন্যান্য অংশে এই ধরনের দাগ হতে পারে। অনেক মহিলাদের গর্ভধারণ কালীন সময়ে পানি চলে আসে শরীরে, পানির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে আমাদের শরীরের চামড়া ফুলে যায়।
- কিন্তু বাচ্চা প্রসবের পর এসকল অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে গেলেও চামড়ার যে অত্যাধিক বৃদ্ধি পাওয়া অংশগুলো স্বাভাবিক হওয়ার ক্ষেত্রে দাগের সৃষ্টি করে দেয়।
- এগুলোর সঠিকভাবে পরিচর্যা না নেওয়ার কারণে এগুলো কিন্তু আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে দিতে পারে।
- তাই সঠিক সময়ে এ ধরনের দাগগুলো প্রতিকার করা আমাদের উচিত।
- এক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, শুধুমাত্র গর্ভপাতের পর, বাচ্চা প্রসবের পর, কিন্তু এই ধরনের দাগ দেখা যায় না। গর্ভধারণকালে এ ধরনের দাগ হতে পারে।
- তাই আমাদের যে ধরনের ট্রিটমেন্ট আমরা করিনা কেন সেটা দুইভাবে করতে হবে বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় এবং বাচ্চা প্রসব হবার পরের অবস্থায়।
বাচ্চা গর্ভে থাকা মাত্রিত্বকালীন দাগ দূর করার প্রাকৃতিক ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রতিকারমূলক অবস্থাঃ
- প্রথমে আমাদের বাচ্চা গর্ভে থাকা অবস্থায় যে ধরনের প্রাকৃতিক ঘরোয়া পদ্ধতিতে যে সকল প্রতিকারমূলক অবস্থা তা জানতে হবে।
- সাধারণত আমাদের পেটের চামড়া বাচ্চার বয়স যখন ছয় থেকে সাত মাস বা তার চেয়ে বেশি হয় তখন এই দাগ গুলো বেশি দেখা যায়, তখন আমাদের এই সময়টাতে খুব বেশি যত্নবান হতে হবে।
- তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে কেস্টর অয়েল পেটে ম্যাসাজ করতে হবে।
- তার সাথে সাথে আমাদেরকে ত্বকের মসরাইজার ধরে রাখার জন্য কেস্টর অয়েল এর সাথে মধু মিক্স করে ব্যবহার করতে হবে।
- এই মাত্রিত্বকালীন ফাটা দাগ দূর করার জন্য জায়তুন তেল কিন্তু অনেক ভালো কাজ করে থাকে। এটা আমাদের ফেটে যাওয়া চামড়াকে পুনরায় ঠিক করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কাজ করে।
বাচ্চা প্রসবের পরে মাতৃত্বকালীন দাগ দূর করতে ডিম ও শশার মিশ্রণঃ
- বাচ্চা প্রসবের পরে মাতৃত্বকালীন দাগ দূর করতে যে ঘরোয়া পদ্ধতি আপনাদের ব্যবহার করবেন তার জন্য যে সকল উপকরণ লাগবে……………
- ১ টি ডিমের সাদা অংশ।
- ৩ টেবিল চামচ শশার রস।
যেভাবে ব্যবহার করবঃ
- উপকরণ দুটো একসাথে করে আমাদের পেটের যে যে অংশে মাতৃজনিত দাগ রয়েছে সেখানে লাগাতে হবে।
- নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আমাদের মাতৃত্বজনিত দাগ কিন্তু অনেকটাই কমে যাবে।
মাতৃত্ব জনিত দাগ দূর করতে মধুর সাথে টক দই ও মুলতানি মাটির মিশ্রণঃ
এই প্যাকটি তৈরি করতে যে সকল উপকরণ লাগবে……………
- ১ কাপ মুলতানি মাটি।
- ২ চা চামচ মধু।
- ২ চা চামচ টক দই।
ব্যবহার করবেন কিভাবেঃ
- উপকরণ গুলো ভালোমত মিক্স করে পেটের চামড়ায় ভালো মতো করে লাগাতে হবে।
- এটা নিয়মিত ব্যবহার করলে আমাদের ত্বক থেকে মাতৃজনিত দাগ চলে যাবে।
৩। মাতৃত্বকালীন দাগ দূর করতে হলুদের সাথে গোলাপ জল ও চিনির মিশ্রণঃ
এটি বানানো অনেক সহজ কিন্তু অনেক বেশী কার্যকরী। এটি আমাদেরকে যেভাবে তৈরি করতে হবে………
- ২ টেবিল চামচ হ্লুদের গুড়া।
- ১ টেবিল চামচ গোলাপ জল।
- ১ চা চামচ চিনি।
- ১ টি লেবু
যেভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- একটি বাটিতে চিনি ও হলুদ বাটা নিয়ে ভালোমতো মিক্স করে হালকা গোলাপ জল দিতে হবে।
- তারপরে লেবু চাক চাক করে কেটে সেখান থেকে কিছু পরিমাণ লেবুর চাক নিয়ে মিশ্রণের উপর রেখে সেই লেবুর চাক গুলো পেটের উপর মাসাজ করতে হবে।
- ৫-১০ মিনিট সময় ধরে আলতো আলতো ভাবে ম্যাসাজ করার পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এরপর একটি ভাল মানের ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগিয়ে দিতে হবে।
উপরে যে সকল ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক প্যাক নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করলাম,এই প্যাক গুলো কিন্তু সত্যি অনেক কার্যকরী। এবং বিভিন্ন ধরনের বাজার থেকে কেনা প্রোডাক্ট এর চেয়ে হাজারগুন ভালো ফলাফল আপনারা পাবেন।