রান্নাঘরে খাবারে ব্যবহৃত অসংখ্য মসলার মধ্যে মসলা হিসেবে হলুদ অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু এছাড়াও হলুদের রয়েছে অসংখ্য ব্যবহার। রূপচর্চায় হলুদ বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য হলুদে বিদ্যমান প্রাকৃতিক গুনাগুন অত্যন্ত উপকারী। তবে কোনো একটি বিষয় আমাদের জন্য খুব বেশি উপকারী হলেও বারবার ব্যবহারের ফলে এটি আমাদের জন্য ক্ষতির কারণও হতে পারে। হ্যাঁ বন্ধুরা অতিরিক্ত হলুদ ব্যবহারে হলুদ অপকারী হয়ে দাঁড়ায়। তাই মাত্রাতিরিক্ত হলুদ ব্যবহার না করে হলুদের পরিমিত ব্যবহার আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা হলুদের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিশদভাবে জানেন না। তাই আপনাদের জন্য শেয়ার করছি হলুদে ব্যবহারের অত্যন্ত কার্যকরী উপকারিতা এবং হলুদের অতিরিক্ত ব্যবহারে এর অপকারিতা সমূহ।তাহলে চলুন বন্ধুরা দেখে নেয়া যাক হলুদের উপকারিতা এবং অপকারিতা সমূহ।
হলুদের উপকারিতা সমূহঃ
সুস্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান নিয়ামক হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত ওজন । হলুদে রয়েছে এমন কিছু প্রাকৃতিক গুনাগুন যা আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং ওজন হ্রাসের সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাবারের সাথে পরিমিত পরিমাণ হলুদ ব্যবহার করলে আমাদের স্বাস্থ্য ফিট এবং শক্তিশালী থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
হলুদে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফসফরাস, প্রোটিন এবং খনিজ লবণ যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। নিয়মিত খাবারের হলুদ পরিমিত পরিমাণ হলুদ ব্যবহার করলে বিভিন্ন ধরনের জটিল ও কঠিন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। হলুদ আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে হলুদঃ
হলুদের অনন্য প্রাকৃতিক উপাদানের জন্য ত্বকের যত্নে রূপচর্চায় বহুকাল ধরেই হলুদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রায় সব ধরনের উন্নতমানের প্রসাধনীতে হলুদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
হলুদ আমাদের ত্বকে দ্রুত সময়ে উজ্জ্বল ফর্সা ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ব্রন ও ব্রনের দাগ দূর করতে হলুদ অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়াও মুখের মেছতার দাগ, বলিরেখা, বুড়িয়ে যাওয়া ভাব, ফাইন লাইন রিংকেল ইত্যাদি দূর করতে হলু খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
হলুদ বদহজম দূর করেঃ
আমাদের পাকস্থলী তে গ্যাস্ট্রিক জাতীয় উপাদান এর আধিক্য আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে তুলে। হলুদে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান পাকস্থলীর স্বাভাবিক কর্ম ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে এসব সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তি দেয় ফলে বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর হয়।
ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে হলুদঃ
হলুদে বিদ্যামান কারকিউমিন আমাদের শরীরের স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ সচল রাখতে সাহায্য করে। তাই ফুসফুসের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে হলুদ অত্যন্ত কার্যকরী।
এছাড়াও এলার্জি, কাশি, হাঁপানি, । ঠান্ডা কফ ইত্যাদি রোগ মুক্তির জন্য হলুদ ব্যবহার করলে ভালো সুফল পাওয়া যায়।
মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে হলুদঃ
হলুদে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণে anti-inflammatory উপাদান আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করে। দুশ্চিন্তা এবং স্ট্রেস থেকে আমাদের মস্তিষ্ককে প্রেসার মুক্ত রাখতে হলুদ অত্যন্ত কার্যকরী।
হলুদ এর অপকারিতা সমূহঃ
হলুদ পেট খারাপ করেঃ
হলুদের অনন্য প্রাকৃতিক গুণের জন্য অনেকেই বলে থাকেন বেশি পরিমাণে হলুদ খাওয়ার জন্য। কিন্তু নিয়মিত বেশি পরিমাণ হলুদ খেলে । পেটের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে যেমন ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানা এবং বমি বমিভাব ইত্যাদি।
এলার্জি সমস্যা বাড়াতে হলুদঃ
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদের হলুদে এলার্জি রয়েছে। তাই নিয়মিত অতিমাত্রায় হলুদ সেবন করলে তাদের এলার্জি সমস্যা অনেক বেশি প্রকোপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অতিরিক্ত হলুদ ব্যবহার করবেন না।
যকৃতে পাথর বাঁধতে হলুদঃ
হলুদ লিভার বা যকৃৎ এর জন্য অত্যন্ত উপকারী কিন্তু অতিমাত্রায় হলুদ সেবন করলে । আমাদের যকৃতে পাথর বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অতিমাত্রায় হলুদ ব্যবহারে সতর্ক হোন।
ওষুধের সাথে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
বিভিন্ন সময়ে অতিমাত্রায় হলুদ সেবন করলে এটি ওষুধের সাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া করে। ফলে আপনি যে সমস্যাটির জন্য ওষুধ সেবন করছেন তা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কেমোথেরাপিতে বাধা প্রদানঃ
আজকাল বিভিন্ন জটিল কঠিন রোগের সমাধান হিসেবে কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়। অতিমাত্রায় হলুদ সেবন করলে কেমোথেরাপির স্বাভাবিক কার্যক্রম মানুষের শরীরে চালিয়ে যেতে বাধাগ্রস্ত হয়। তাই অতিমাত্রায় হলুদ ব্যবহারে সতর্ক হোন।
কোন একটি জিনিসে শত গুণ থাকার পরেও তার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কখনোই ভালো ফল বয়ে আনে না।।ঠিক তেমনি হলুদ ব্যবহারে সতর্ক হোন। পরিমিত মাত্রায় হলুদ ব্যবহার করুন। সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করুন।
ধন্যবাদ